শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের একটি অনতিপরিচিত ছোটগল্প হলো ‘বিলাসী’। গল্পটি পাঠকদের কাছে খুব একটা পরিচিতি পায়নি। এই গল্পটির একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা এখানে প্রকাশ করলাম।
শরৎচন্দ্রের ‘বিলাসী’ : প্রেমের গল্প নাকি সমাজের প্রতি ব্যঙ্গ
১
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘বাঙালির হৃদয় রহস্যের শিল্পী’। জনৈক সমালোচক তাঁকে ‘যুগসন্ধির ভাবসংকটের শিল্পী’ বলে উল্লেখ করেছেন। সুকুমার সেন তাঁর ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’ গ্রন্থে শরৎচন্দ্রের আবির্ভাবকে পারম্পর্য হিসাবে দেখেননি, তিনি জানিয়েছেন—‘বাঙ্গালা সাহিত্যে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধায়ের আবির্ভাব অনেকটা আকস্মিকই বলিতে হইবে’। তবে শরৎচন্দ্রের আবির্ভাব প্রকৃতই ‘আকস্মিক’ ছিল কিনা তা আলোচনা-সাপেক্ষ। সমকালীন সমাজ-প্রেক্ষিতে উপন্যাস কিভাবে লেখা হচ্ছিল তার পটভূমি বিশ্লেষণ করলে এই আকস্মিকতা যে প্রত্যাশিত ছিল তা সমালোচকগণ স্বীকার করেন। আলোচনার সূচনায় উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি ‘যুগসন্ধি’র লেখক। এ প্রসঙ্গে গোপিকানাথ রায়চৌধুরীর মন্তব্য উল্লেখ করা যায়—
‘…তিনি একদিকে যেমন ভারতী-পর্বের কথাসাহিত্যের বিষয়বস্তু-সংক্রান্ত গণতান্ত্রিকচেতনার ধারাকে অর্থাৎ সমাজের অবহেলিত, বিশেষত পতিতা নারীর দুঃখ বেদনার শিল্পরূপের ধারাকে ‘কল্লোলে’র কালের দিকে অগ্রসর করে দিয়েছেন, অন্যদিকে, দেশের পুরনো রক্ষণশীল সমাজ ও পরিবারের কাঠামোয় মানুষের হৃদয়বত্তা ও মনুষ্যত্বের প্রতি গভীর আস্থাও প্রকাশ করেছেন’।
বাংলা সাহিত্যের সমকালীন চিন্তা-চেতনার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী প্রবণতার যোগসূত্র তিনি। আর এই স্ববিরোধিতার জন্যই শরৎচন্দ্র সমালোচিত হয়েছেন—‘Often Saratchandra started with an open revolt but the moment things come to ahead, he stopped short and beat a retreat as if scared by his own temerity.’ এইরূপ দ্বিবিধ ভাবমুখী এক শিল্পীর লেখনী বরাবর রসসিক্ত হয়েছে বঞ্চিতা-পতিতা-অভাগিনী নারীর কথা বলতে গিয়ে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও শরৎচন্দ্রের এই শিল্পী-প্রতিভার খবর রাখতেন, আর তাই ‘পুনশ্চে’র ‘সাধারণ মেয়ে’ কবিতায় মালতীর মুখ দিয়ে শরৎচন্দ্রের এই প্রতিভার উল্লেখ করলেন।
সংক্ষেপিত
মূল প্রবন্ধের নাম : শরৎচন্দ্রের ‘বিলাসী’ : প্রেমের গল্প নাকি সমাজের প্রতি ব্যঙ্গ
লেখক : সুখেন মণ্ডল
গ্রন্থ : বাংলা ছোটগল্প পর্যালোচনা, বিশ শতক, দ্বিতীয় খণ্ড (সম্পাদনা – শ্রাবণী পাল), অক্ষর প্রকাশনী, কলকাতা, ২০২৩।
বইটির প্রচ্ছদ ও সূচীপত্র



