বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় : কয়েকটি প্রসঙ্গ

বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়

বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় : কয়েকটি প্রসঙ্গ

এক ।। শুরুর কথা

সম্প্রতি ‘দেশ’1 পত্রিকায় ‘সার্ধশতবর্ষে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়’ শীর্ষক একটি  প্রবন্ধে শুভাশিস চক্রবর্তী সাহিত্যিক প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের (১৮৭৩-১৯৩২) উপন্যাস সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, “নবীন সন্ন্যাসী, জীবনের মূল্য, গরীব স্বামী-র মতো উপন্যাসের পটভূমি, আদর্শবোধ, মানবিকতার পরিসর, সর্বোপরি সামাজিক মূল্যবোধের সেই যুগ থেকে একুশ শতক অনেক দূরে সরে এসেছে।”2 অথচ উক্ত প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক ‘রত্নদীপ’-এর মতো উপন্যাসের নামোল্লেখ পর্যন্ত ভুলে গেলেন, যেখানে ঔপন্যাসিক প্রভাতকুমারের উজ্জ্বল প্রতিভার স্বাক্ষর আমরা লক্ষ করি। শুধুমাত্র কয়েকটি ছোটোগল্পের নামোল্লেখ ও কিছু আনুষঙ্গিক বক্তব্যে (‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত উল্লিখিত প্রবন্ধে) আচ্ছাদিত হয়ে গেল তাঁর সাহিত্যিক প্রতিভা ! সার্ধ শতবর্ষের প্রেক্ষিতে ঔপন্যাসিক প্রভাতকুমারের স্মৃতি-তর্পণের এ’রূপ অস্বচ্ছতা আমাদের কাম্য নয়। বরং জগদীশ ভট্টাচার্য বহু আগেই প্রভাতকুমারের সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির স্বরূপ খুব সহজেই আমাদের ধরিয়ে দিয়ে গেছেন—

“জীবন-জিজ্ঞাসায় তিনি বিদ্রোহী নন; নতুন মূল্যবোধ সৃষ্টির চেয়ে চিরাগত মূল্যবোধের পুনঃপ্রতিষ্ঠার দিকেই তাঁর প্রবণতা। আমাদের ব্যাক্তি ও পারিবারিক জীবনে সমাজ-স্বীকৃত সম্পর্কের নিষ্ঠা ও পবিত্রতার যথাযথ মূল্য তাঁর সাহিত্যে প্রতিশ্রুত”3

‘জীবন-জিজ্ঞাসা’য় যিনি ঐতিহ্যাগত মূল্যবোধকেই অধিক গুরুত্ব দেন, তাঁর রচনায় ‘সেই বিষয়’কেই অধিক গুরুত্ব সহকারে আমাদের বিবেচনা করা উচিৎ।

বাংলা সাহিত্যে ব্যারিস্টার-সাহিত্যিকের কোনোদিন অভাব ছিল না। মাইকেল মধুসূদন দত্ত, প্রমথ চৌধুরী সহ অনেকেই ওকালতি বিদ্যাশিক্ষা গ্রহণের পাশাপাশি বাংলা সাহিত্যেও নিজেদের ব্যাপৃত রেখেছিলেন। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ও এঁদের মধ্যে রয়েছেন। বাংলা কথাসাহিত্যের আঙিনায় প্রভাতকুমারের শতাধিক গল্প এবং ১৪টির মতো উপন্যাস বিরাজমান; যেগুলির প্রত্যেকটিতেই হয়তো সাহিত্যিক প্রতিভার সম-বিচ্ছুরণ ঘটেনি। কিন্তু চিরাচরিত মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার দৃষ্টি নিয়ে যদি তাঁর রচনার মূল্যায়ন করা যায়, তবে নিঃসন্দেহে তাঁর কৃতিত্বকে উপেক্ষা করা যায় না।

প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের উপন্যাস সংখ্যা4 ১৪টি, যথা—‘রমাসুন্দরী’ (১৯০৮), ‘নবীন সন্ন্যাসী’ (১৯১২), ‘রত্নদীপ’ (১৯১৫), ‘জীবনের মূল্য’ (১৯১৭), ‘সিন্দূর কৌটা’ (১৯১৯), ‘মনের মানুষ’ (১৯২২), ‘আরতি’ (১৯২৪), ‘সত্যবালা’ (১৯২৫), ‘সুখের মিলন’ (১৯২৭), ‘সতীর পতি’ (১৯২৮), ‘প্রতিমা’ (১৯২৮), ‘গরীব স্বামী’ (১৯৩০), ‘নবদুর্গা’ (১৯৩০) এবং অসম্পূর্ণ ‘বিদায়বাণী’ (১৯৩৩)। এছাড়াও একটি ‘বারোয়ারি উপন্যাস’-এর কিয়দংশ তিনি লিখেছেন।5 যদিও এর মধ্যে অধিকাংশ উপন্যাস আকারে ক্ষুদ্র, অনেকক্ষেত্রে বড়োগল্পকে উপন্যাসের আকার দেওয়া। যাইহোক আমরা এখানে কয়েকটি উপন্যাসকে সামনে রেখে প্রভাতকুমারের ঔপন্যাসিক প্রতিভার দিকগুলি চিহ্নিত করার চেষ্টা করব।

দুই ।। উপন্যাসের অন্দরে

রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রের মধ্যবর্তী পর্বে সাহিত্য রচনায় ব্রতী থেকে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় নতুন কোনো সাহিত্যিক দৃষ্টিভঙ্গির অবতারণা ঘটাননি ঠিকই, কিন্তু যে মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠায় কলম ধরেছেন তাতে যে তিনি বিফল হননি তা বলা চলে। প্রাবন্ধিক সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায় রবীন্দ্র-সমকালীন কিংবা রবীন্দ্র-পরবর্তী উপন্যাসকদের সাহিত্য প্রচেষ্টার ধারায় প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়কে ‘প্রতিনিধিস্থানীয় লেখক’6 বলে উল্লেখ করেছেন। সংহত পরিমিতিবোধ ও বঙ্কিমী পাপপুণ্যের চিরাচরিত ভাবধারায় জারিত তাঁর উপন্যাসগুলি পাঠক প্রতিবেশে বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল।

‘রমাসুন্দরী’ লেখকের গ্রন্থাকারে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস। ছত্রিশটি পরিচ্ছেদে সমাপ্ত এই উপন্যাসে রমাসুন্দরীর চরিত্র পরিপূর্ণভাবে ফুটে ওঠেনি। বিবাহ-পূর্ব ও বিবাহ-পরবর্তী রমার কোনো সাদৃশ্য আমরা পাই না। তাই অনেক সমালোচক রমা চরিত্রের সম্ভাবনাকে বিবাহের যাঁতাকলে নিষ্পিষ্ট হতে দেখে প্রভাতকুমারের নীতিবোধ, ঘটনাবিন্যাস-প্রীতি এবং চরিত্র-বিশ্লেষণের অক্ষমতাকে দায়ী করে থাকেন। কিন্তু বিবাহপূর্ব দৃপ্ত, পৌরুষসুলভ, সংকোচনহীন, সহবত-শিক্ষাহীন রমাসুন্দরীকে যদি নবগোপালের অন্তপুরে স্থাপিত করি, তবে রমাসুন্দরীর চরিত্র্য-বৈশিষ্ট্য নিমেষেই ভেঙে পড়ে। সেকারণেই বিবাহ-পরবর্তী রমাসুন্দরীকে সহবত শিক্ষা প্রদানেই বেশি উদ্যোগী হয়েছেন লেখক। শুধু তাই নয়, এই সময় থেকেই রমাসুন্দরীর ব্যাক্তিস্বাতন্ত্র্য নবগোপালের ছায়ায় আচ্ছাদিত হয়েছে। একইভাবে কুটিল চরিত্রের সীতানাথ ও তার মা—উভয়েই ষড়যন্ত্রের ব্যর্থতায় কাহিনি থেকে অন্তর্হিত হয়েছেন। অন্যদিকে জমিদার কান্তিচন্দ্রের তেজস্বিতা পুত্রস্নেহে নির্বাপিত হয়েছে অচিরেই।  নবগোপালের মধ্যে যে স্বাধীনচেতা, বলিষ্ঠ মনের পরিচয় বিবাহ-পূর্ব অংশে লক্ষ করি, পরবর্তী অংশে তার অভাবে আমাদের হতাশ হতে হয়। কিন্তু জমিদার পিতার অমতে, নিজের স্বাতন্ত্র্যবোধ ও প্রেমের পূর্ণতার লক্ষ্যে অরণ্যচারী, উপযুক্ত শিক্ষাদীক্ষাহীন একটি মেয়ের পাণিগ্রহণে গৃহত্যাগ ও নিজ প্রচেষ্টায় সংসারযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার নজির সমকালীন বাংলা সাহিত্যে বিরল। তাই চরিত্রের সম্পূর্ণতাদানে লেখক ব্যর্থ হলেও এক্ষেত্রে তাঁর কৃতিত্বকে উপেক্ষা করা চলে না।

‘নবীন সন্ন্যাসী’ লেখকের দ্বিতীয় উপন্যাস। গীতায় ‘কর্মযোগ’ ও ‘ভক্তিযোগে’র মাধ্যমে ‘নৈষ্কর্মসিদ্ধি’র যে কথা বলা হয়েছে, মোহিতলালের উপলব্ধিতে লেখক তা’ দেখানোর চেষ্টা করলেন। ‘গীতা’র ‘কর্মযোগ’ অধ্যায়ে বলা হয়েছে—

See also  অনিল ঘড়াইয়ের 'নুনবাড়ি', পেশাগত সংকট ও এক নারীর বেঁচে থাকার লড়াই

‘ন কর্ম্মণামনারম্ভান্নৈষ্ক্ররম্মং পুরুষোহশ্নুতে।

ন চ সন্ন্যাসনাদেব সিদ্ধিং সমধিগচ্ছতি।।’7

অর্থাৎ, কেবলমাত্র সর্বপ্রকার কর্ম পরিত্যাগ করে সন্ন্যাসজীবন অবলম্বন দ্বারা মোক্ষলাভ সম্ভব নয়। নবযুগের সন্ন্যাসী মোহিতের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যেন এটাই প্রতিফলিত হয়েছে। অনেকেই বলতে পারেন, ‘নবীন সন্ন্যাসী’ তত্ত্বাশ্রয়ী উপন্যাসের লক্ষনাক্রান্ত। কিন্তু এর কারণ অনুসন্ধানে দেখা যাবে, উপন্যাসের বিষয়বস্তুর প্রতিষ্ঠায় লেখক তত্ত্বের আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছেন। প্রভাতকুমারের আর কোনও উপন্যাসে বোধহয় এরূপ তত্ত্বব্যাখ্যার প্রয়াস নেই।

নবীন সন্ন্যাসীর প্রেক্ষাপট উনবিংশ শতাব্দীর হিন্দু পুনরুজ্জীবন আন্দোলন ও তৎপরবর্তী হিন্দুসমাজ। রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের আদর্শে উদ্বুদ্ধ শিক্ষিত যুবক সাধারণের মধ্যে সংসারত্যাগ ও সন্ন্যাসজীবন গ্রহণের যে প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছিল; কিন্তু মনে-প্রাণে সেই আদর্শ অনুসরণের ক্ষেত্রে একাগ্রতার একান্ত অভাব ছিল8—তথাকথিত সেই যুবসমাজই লেখকের অন্বিষ্ট। সংসারবিমুখ মোহিতকে একরকম ‘বঙ্কিমী পাপ-শুদ্ধিকরণে’র পথে হাঁটিয়ে দেখাতে চাইলেন গৃহাশ্রম ও দাম্পত্য জীবনের নিহিত সৌন্দর্য।

প্রভাতকুমারের উপন্যাসের প্রধান গুণই হল চরিত্র ব্যতিরেকে ঘটনার প্রাধান্যতা। একারণে তাঁর উপন্যাসের অধিকাংশ চরিত্রই ফুটে উঠতে পারেনি; ব্যতিক্রম গদাধর পাল ওরফে গদাই—পঞ্চম পরিচ্ছেদে যার আবির্ভাব এবং উপন্যাসের শেষ পরিচ্ছেদ (৫২তম) পর্যন্ত যার অবাধ গতি। অধিকাংশ সমালোচকগণ এই একটি চরিত্রের প্রতি অধিক দৃষ্টি দিয়েছেন।9 কপট-ঠক-ভণ্ড চরিত্রের যেন পরকাষ্ঠা, যে ‘অন্নদামঙ্গলে’এর ভাঁড়ুদত্ত কিংবা ‘আলালের ঘরের দুলাল’এর ঠকচাচার সমগোত্রীয়। অন্যান্য চরিত্রের মধ্যে নায়ক মোহিতলাল, দাসী হরিদাসী, ভণ্ড সন্ন্যাসী ক্ষেমানন্দ ছাড়া সরোজিনী (চিনি), গোপীকান্ত, গঙ্গামণি  প্রভৃতির চরিত্র খুব একটা সুচিত্রিত নয়।

‘জীবনের মূল্য’ বিবাহ-ইচ্ছুক এক বৃদ্ধের করুণরসাত্মক কাহিনি। উনবিংশ শতকে রচিত ‘ফার্স’ (মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বুড় শালিকের ঘাড়ে রোঁ’; দীনবন্ধু মিত্রের ‘বিয়ে পাগলা বুড়ো’ প্রভৃতি) জাতীয় ব্যঙ্গ-কৌতুক নয়, বরং করুণ রসের সঞ্চার লক্ষ করা যায় এই উপন্যাসে। ঔপন্যাসিক প্রভাতকুমার গিরিশের ভোগ-লালসার পরিবর্তে একটি স্বপ্নদর্শনের প্রসঙ্গ এনে তার বিবাহের ব্যাখ্যা দিতে সচেষ্ট হয়েছেন। ফলস্বরূপ উপন্যাসে অযাচিতভাবে কয়েকটি মৃত্যু এবং গিরিশ-প্রভাবতীর ট্র্যাজিক পরিণতি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে।

‘সিন্দূরকৌটা’ প্রভাতকুমারের বৃহৎ উপন্যাসগুলির মধ্যে একটি। পতিব্রতা বকুরাণীর সিঁদুর-কৌটো উপহারের মধ্যে দিয়ে সাদরে সপত্নী (সুশীকে) গ্রহণ উপন্যাসের মূলীভূত বক্তব্য। লেখক জটিলতা পরিহার করে বকুরাণী-বিজয়-সুশীর ত্রিকোণ সম্পর্কের আবর্তকে ভারতীয় পাতিব্রত্যের দৃষ্টিকোণে লঘু করে পরিবেশন করেছেন। বৃহৎ সম্ভাবনার এরূপ লঘু পরিণতি প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের অধিকাংশ উপন্যাসের সাধারণ লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

‘মনের মানুষ’ উপন্যাসে কুঞ্জ-ইন্দুবালার অপরিণত প্রেম বিশেষ মাত্রা পেয়েছে। পত্রালাপের মধ্য দিয়ে তাদের কৈশোর প্রেম পরিণতি পায় না।  প্রকৃতপক্ষে সামাজিক ও আর্থিক বৈষম্যের কারণে কুঞ্জ কিংবা ইন্দুবালা পরস্পরের মনের মানুষ হয়ে উঠতে পারেনি। তাই স্ব স্ব যোগ্যতা ও প্রতিবেশ অনুযায়ী উভয়েই মনের মানুষের সন্ধান করেছে—ইন্দুবালা গ্রহণ করেছে যোগেন্দ্রকে এবং কুঞ্জ এক গ্রাম্য-বালিকাকে। ‘সত্যবালা’ উপন্যাসে কিশোরীর পলায়নবৃত্তি ও সত্যবালার একনিষ্ঠ প্রেম স্থান পেয়েছে। ‘সতীর পতি’-ও ত্রিকোণ সম্পর্কের; যেখানে হীরালাল-সুরবালা-রেবতীর প্রেম উপস্থাপিত হয়েছে। সুরবালার সতীত্বের জোরেই হোক কিংবা রেবতীর প্রেমাস্পদের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা জন্যেই হোক—কাহিনির পরিণতিতে দেখি সুরবালার নিকট হীরালালের প্রত্যাবর্তন। আলোচিত উপন্যাসগুলি ছাড়া ‘প্রতিমা’, ‘আরতি’, ‘গরীব স্বামী’, ‘নবদুর্গা’ প্রভৃতি উপন্যাসের আলোচনার আবশ্যকতা এখানে আছে বলে মনে হয় না; কারণ—“…উপন্যাসগুলিতে চরিত্রাঙ্কণের বিশেষ চেষ্টা নাই, তাহারা সম্পূর্ণরূপে আখ্যানবৈচিত্র্যের উপর প্রতিষ্ঠিত—তাহারা প্রভাতকুমারের ঔপন্যাসিক খ্যাতি-বর্ণনে আদৌ সহায়তা করে না।”10

তিন ।। প্রভাতকুমারের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস ‘রত্নদীপ’

‘মানসী’ পত্রিকায় ফাল্গুন ১৩১৯ থেকে মাঘ ১৩২১ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত ‘রত্নদীপ’ উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল। এই উপন্যাস প্রভাতকুমারের শ্রেষ্ঠ রচনার মধ্যে একটি।11 বিধায়ক ভট্টাচার্য পরবর্তীকালে এই উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়েছিলেন12। তাছাড়া গিরিশ কারনাড ও হেমা মালিনী অভিনীত বাসু চ্যাটার্জীর ‘রত্নদীপ’ (১৯৭৯) এই উপন্যাসের প্লটেই নির্মিত। অতএব ‘রত্নদীপে’র ঘটনাবিন্যাস ও চরিত্র সংযোজনায় লেখকের ঔপন্যাসিক প্রতিভা সর্বাধিক ক্রিয়াশীল ছিল তা বোঝা যায়। খস্রুপুর রেলস্টেশনের ছোটোবাবু রাখাল ভট্টাচার্য নিজ চরিত্রগুণে ও ঘটনার পাকচক্রে পাক খেয়ে উপস্থিত হয় ভবেন্দ্রর অন্তপুরে—বউরাণীর সংস্পর্শে। কিন্তু ‘বউরাণীর সরল পবিত্র রূপ কোমল মধুর ব্যাক্তিত্ব এবং তাহার অচঞ্চল স্বামীভক্তি ধীরে ধীরে রাখালকে তাহার প্রতি গভীরভাবে আকৃষ্ট করিয়াছে। অকৃত্রিম প্রেমের স্পর্শে রাখালের নবজন্ম হইয়াছে।’ ক্রমশ রাখালের বৈষয়িক লোভ মুছে গিয়ে তাকে অন্যরূপের মানুষ করে তুলেছে। সমাপ্তিতে দেখা গেছে রাখালের গৃহত্যাগী স্ত্রী সুরবালাকে গ্রহণ ও কাশীবাসী সতীসাধ্বী বউরাণীর মৃত্যুবরণ।

“আমি যাব—এ বিষম প্রলোভন দমন করা আমার সাধ্য নয়।–লক্ষ টাকা আয়ের জমিদারী—যুবতী স্ত্রী—একটা মিথ্যা কথার দ্বারাই আমি লাভ করিতে পারি। যে এতক্ষণ চিতায় পুড়ে ছাই হয়ে গেছে—তার বয়স, তার গায়ের রং, তার চেহারা—সমস্তই আমার মত।…তার জীবনচরিত আমার হাতে—তাতে প্রত্যেক খুঁটিনাটি কথাটি পরয্যন্ত লেখা আছে। সে খানা আমি মুখস্ত করে নিলে, কার সাধ্য আমায় সন্দেহ করে? রাখাল, তুমি মর—তুমি মর—মরে’ ভবেন্দ্র হয়ে জন্ম গ্রহণ কর।”13

—রাখালের এই মনস্তাত্বিক ‘মনোলগ’ চরিত্রটিকে নিঃসন্দেহে অসাধারণত্বে উন্নীত করেছে। চরিত্রসংযম, প্রলোভন জয় এবং সৎ সংকল্পের মহত্ববোধে আরোহী করে তুলে রাখাল চরিত্রের পরিশুদ্ধি দেখিয়েই ঔপন্যাসিক পরিতৃপ্তি লাভ করলেন। অন্যদিকে বউরাণীর পাতিব্রত্যের দৃঢ়তা এবং তার “জীবনের করুণ ব্যর্থতার সূক্ষ্ম উপলব্ধি ও সুন্দর চিত্র আমাদের মনকে গভীরভাবে স্পর্শ করে।”14

See also  SEZ ও একটি বাংলা উপন্যাস 'বন্দর', ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস 'বন্দর'

দুর্বৃত্ত খগেন চরিত্রের সঙ্গে ‘নবীন সন্ন্যাসী’র গদাই পালের সাদৃশ্য দুর্লক্ষ্য নয়—কারণ উভয়েরই মূল লক্ষ্য অর্থপ্রাপ্তি। অন্যান্য খল চরিত্রের মতো এই চরিত্রটিও লেখকের সহানুভূতি বঞ্চিত নয়। রাখালের স্ত্রী সুরবালা ও অভিনেত্রী কনক স্বল্প পরিসরের মধ্যেও পরিস্ফুট হয়েছে। বস্তুত ‘রত্নদীপ’ প্রভাতকুমারের উপান্যাসমালার সেই ফুল, যা ব্যতীত মাল্য-বন্ধন যেমন সম্ভব নয়, সৌন্দর্যও অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়
‘রত্নদীপ’ উপন্যাসের প্রচ্ছদ, অ্যাডর্ন পাবলিকেশন (বাংলাদেশ) কর্তৃক সাহিত্যকীর্তি গ্রন্থমালা সিরিজে প্রকাশিত

কোনো কোনো সমালোচক15 এই উপন্যাসটির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘নৌকাডুবি’-র সাদৃশ্য পেয়েছেন; আবার কেউ16 জগদীশ গুপ্তের ‘অসাধু সিদ্ধার্থ’ মধ্যে এই উপন্যাসের উন্নত সংস্করণ প্রত্যক্ষ করেছেন। ‘নৌকাডুবি’র কমলা যেমন দৈব-দুর্বিপাকে রমেশের সঙ্গে অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে; এই উপন্যাসের বউরাণীও প্রায় একইভাবে ছদ্মবেশী রাখালের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধে আবদ্ধ হয়েছে। রমেশের পরিচয় জানার পর কমলার বিরূপতার সঙ্গে রাখালের ভবেন্দ্র-মুখোশ সরে যাওয়ার পর বউরাণীর বিরূপতার সাদৃশ্য উপেক্ষার নয়। যদিও উভয়ের মনস্তাত্ত্বিক সংগঠনের পারথক্যহেতু উক্ত ‘বিরূপতার’ ভিন্ন ভিন্ন কারণ দায়ী। কমলা স্বাভাবিক মানসিক প্রতিক্রিয়ায় রমেশকে প্রত্যাখ্যান করেছে; কিন্তু বউরাণী চালিত হয়েছে চিরাচরিত হিন্দুনারীর আদর্শে, ঐতিহ্যাগত সংস্কারে।

জগদীশ গুপ্তের ‘অসাধু সিদ্ধার্থ’ উপন্যাসের প্রকাশকাল ১৯২৯, ‘রত্নদীপ’ প্রকাশের প্রায় ১৪ বছর পর। বৈষ্ণবীর গর্ভে ব্রাহ্মণের জারজ সন্তান নটবর, যে কিনা এক বৃদ্ধা বেশ্যার শয্যাসঙ্গিনী—এরূপ লম্পট চরিত্রের নটবর অজয়া নামের এক সুন্দরী তরুণীর প্রেমাকাঙ্ক্ষায় নিজেকে আমূল বদলে মৃত ‘সিদ্ধার্থ’ হতে চাইল। নটবর তার পূর্বজীবনের সমস্ত শঠতা, কপটতা নিশ্চিহ্ন করে ‘সিদ্ধার্থ’কে আঁকড়ে বাঁচতে চাইল—এই আকাঙ্ক্ষা রাখালের মধ্যেও আমরা দেখি। কিন্তু জগদীশ গুপ্ত নটবরের পাপ-পুণ্যের সহজ-সরল সমাধানে উপনীত না হয়ে তার পাপক্ষমতার ভিতর দিয়েই প্রকাশ করলেন ‘শ্বাশ্বত নিরাময়-সঞ্চারিণী শক্তি’। সমালোচক এই প্রসঙ্গে জানাচ্ছেন—

‘[নটবর] জীবনান্তরের বাসনায় ছলনার পথের পথিক—সেই বাসনার এমনই অন্তর্নিহিত অম্রতধারা যে, তারই অঞ্জলি পানে পাপও, ছলনাও অমর হতে চায়। বিষয়বস্তু এবং বক্তব্য নির্মাণের দিক থেকে জগদীশবাবুর প্রয়াস নিঃসন্দেহে প্রভাতকুমারের থেকে একপদ অগ্রবর্তী।’17

চার ।। প্রভাতকুমারের ব্যর্থতা ও সাফল্য

[ক] প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের শিল্পিমানসে সমকালীন সমাজনিরীক্ষার দারুণ অভিঘাত লক্ষ করা যায় না। রবীন্দ্রনাথের সংস্কার-মুক্ত দৃষ্টিভঙ্গির অনুরাগী হলেও তাঁকে রবীন্দ্র-অনুগামী মোটেও বলা চলে না। তাঁর ছিল প্রাচীনপন্থী দৃষ্টি—যা বহুলাংশে বঙ্কিমেরই প্রভাব-সঞ্জাত। পাপ-পুণ্যের মানদণ্ডে উপন্যাসের চরিত্রগুলির পরিশুদ্ধি ও পাপের পরাজয়ের উপর পুণ্যের ‘নিশান’ স্থাপন তাঁর ঔপন্যাসিক মানসদৃষ্টির অন্যতম চাবিকাঠি। এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই তিনি সর্বাধিক সমালোচিত এবং বন্দিত।

বঙ্কিমচন্দ্রের প্রভাব তাঁর উপন্যাস-মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে—যা পাঠকের কাছে স্বস্তির নয়। উপন্যাসের নামকরণ থেকে গঠনরীতি—সর্বত্রই  বঙ্কিমচন্দ্রের প্রভাব লক্ষ্যনীয়। বঙ্কিম-উপন্যাসের প্রভাব প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় প্রভাতকুমারের ‘সিন্দূর কৌটা’ ও ‘সতীর পতি’ উপন্যাস দুটি। প্রথমটি ‘বিষবৃক্ষে’র সঙ্গে তুলনীয় এবং দ্বিতীয়টি ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’-এর সঙ্গে। বাল-বিধবা কুন্দনন্দিনী নগেন্দ্র-সূর্যমুখীর জীবনে যেরূপ জটিলতার সৃষ্টি করেছে, উগ্র-আধুনিক সুশীও তদ্রূপ জটিলতার সৃষ্টি করেছে বিজয়-বকুরাণীর দাম্পত্যজীবনে। কিন্তু উভয় উপন্যাসের বিষয়বস্তুর সাদৃশ্য থাকলেও পরিণাম ভিন্ন ভিন্ন। কুন্দনন্দিনীর মৃত্যুই নগেন্দ্র-সূর্যমুখীকে পুনরায় কাছে এনেছে; কিন্তু সূর্যমুখীর ক্ষমাশীল দৃষ্টি বকুরাণী পেলেও কুন্দনন্দিনীর মত সুশীকে লেখক দূরে নির্বাসিত করেননি। একইভাবে ‘সতীর পতি’-তে সুরবালা-হীরালালের মধ্যে উপস্থিত হয়েছে নৃত্যপটীয়সী রেবতী—কিন্তু সুরবালার মধ্যে অভিমানিনী ভ্রমরকে খুঁজতে যাওয়া বৃথা। অর্থাৎ উক্ত দুটি উপন্যাসের ক্ষেত্রেই বৃহৎ সম্ভাবনা সমূলেই বিনাশ করেছেন লেখক স্বয়ং এবং মিলনান্তক সুখপাঠ্য রচনার অবতারণা ঘটিয়েছেন।

See also  গোঠ-জীবনের বারোমাস্যা : 3টি বাংলা উপন্যাসের প্রেক্ষিতে

‘আরতি’, ‘সত্যবালা’ কিংবা ‘সুখের মিলন’—তিনটি রচনাতেই বিপুল সম্ভাবনাকে বিসর্জন দিয়ে লেখক বিয়োগ-বর্জিত সুখাবহ প্রতিবেশ নির্মাণে সচেষ্ট হয়েছেন। উল্লিখিত তিনটি উপন্যাসেই ত্রিকোণ সম্পর্কের জটিল ঘুর্ণাবর্ত ও জটিলতা সৃষ্টির অবকাশ লেখক পেয়েছেন; কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই লেখকের জীবনদৃষ্টি বাধ সেঁধেছে। চরিত্রের নিগূঢ় অন্তর্লোক উদ্ঘাটনের পরিবর্তে ঘটনাবৈচিত্র্যে অধিক মনোযগী হয়েছেন। অধিকাংশ সাহিত্য-সমালোচকই প্রভাতকুমারের উপন্যাসে ‘এই ত্রুটি’র দিকে বারংবার অঙ্গুলি-নির্দেশ করেছেন।

[খ] এই প্রবন্ধের সূচনায় ‘সার্ধ শতবর্ষে প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়’ বিষয়ক একটি নিবন্ধের উল্লেখ করে ঔপন্যাসিক প্রভাতকুমারের সাহিত্যে আদৌ সারবস্তু অবশিষ্ট আছে কিনা—তার অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হয়েছিলাম। কতিপয় সাহিত্য-সমালোচকের উদ্ধৃতি-মন্তব্য উদ্ধার করে প্রভাতকুমারের সাহিত্যিক প্রতিভার প্রকৃত মূল্যায়ন কখনোই সম্ভব নয় কিংবা সঠিক পদ্ধতি নয়। প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের সাহিত্যিক প্রতিভার মূল্যায়নে প্রথমেই লেখকের জীবনদৃষ্টির অনুপুঙ্খ আমাদের জানতে হবে। বিপুল সম্ভাবনাময় রচনাগুলি কীভাবে বঙ্কিম-অনুসারী না হয়ে একান্তভাবেই প্রভাতকুমারীয় হয়ে উঠল—তার খোঁজ কি আমরা নিয়েছি? তাঁর কি অভিজ্ঞতার খামতি ছিল নাকি সাহিত্যিক অন্তর্দৃষ্টির অভাব? প্রকৃতপক্ষে প্রভাতকুমার বঙ্কিম-অনুসারী হলেও সহজাত শিল্পিব্যাক্তিত্বের প্রভাবে সহজ-সুন্দর জীবনান্বেষণে সতত ব্যাপৃত ছিলেন। জীবনের প্রকৃত মূল্য সম্বন্ধে অবহিত ছিলেন বলেই উপন্যাসগুলিতে গাঢ়রঙে ফুটিয়ে তুলেছেন নরনারীর প্রেম-মিলনময় সুখীজীবন—যে জীবনের অন্বেষণে আমরা সকলেই উৎসুক। অনেকেই লেখকের এই সহজিয়া দৃষ্টিকে অক্ষমতা হিসেবে চিহ্নিত করছেন। কিন্তু সহজদৃষ্টির সহজাত ক্ষমতাকে লেখকের দোষ না বলে গুণ বলাই শ্রেয়। তাছাড়া দ্বিতীয় ‘বিষবৃক্ষ’ কিংবা দ্বিতীয় ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ তিনি যে লেখেননি, সেখানেই তাঁর কৃতিত্ব। এ প্রসঙ্গে সমালোচক গোপিকানাথ রায়চৌধুরীর একটি মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য :

‘মানুষের দুঃখ বেদনা ও যন্ত্রণাকে যে তিনি অনেকসময় হাসির আলোয় মুছে দিতে চেয়েছেন—এজন্য যেন আমরা প্রভাতকুমারকে লঘুচিত্ত বলে ভুল না করি। বস্তুত প্রভাতকুমারের আশাবাদী দৃষ্টিতে দুঃখযন্ত্রণা, অশ্রু-হাহাকার সত্ত্বেও জীবন এক অমেয় ঐশ্বর্য। …ঐকান্তিক জীবনপ্রতীতি ও বাস্তব অভিজ্ঞতার স্পর্শে তাঁর রচনা আধুনিক কথাসাহিত্যের আসরে সম্মানের আসন পাবার দাবী রাখে।”18

—উক্ত ‘ঐকান্তিক জীবনপ্রীতি’র অজস্র নিদর্শন আমরা তাঁর গল্প-উপন্যাসে দেখতে পাই। তাই তাঁর সাহিত্যিক প্রতিভার মূল্যায়ন যেন এককেন্দ্রিক জীবন-অভিজ্ঞার অনুসারী না হয়। এতে করে সাহিত্যের বিচিত্রগতিকেই অস্বীকার করা হয়—যা সর্বৈব মিথাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।


ব্যবহৃত আকরগ্রন্থ

(১) প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, উপন্যাস গ্রন্থাবলী (১ম), কলকাতা, প্রজ্ঞাভারতী, ১৩৯৩।

(২) প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রত্নদীপ, মানসী, ৫ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, জ্যৈষ্ঠ ১৩২০।

(৩)প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, রত্নদীপ (বিধায়ক ভট্টাচার্য কৃত নাট্যরূপ), কলকাতা, ডি এম লাইব্রেরি, ১৩৪৭।

(৪) প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, সতীর পতি, কলকাতা, পাত্রজ পাবলিকেশন, ১৯৮৭।


সূত্রনির্দেশ

  1. দেশ, ২ জুন, ২০২৩ সংখ্যা।
  2. দেশ, ২ জুন, ২০২৩ সংখ্যা, পৃ. ৩৮
  3. দ্র. ভূমিকাংশ, জগদীশ ভট্টাচার্য (স.), প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ গল্প, কলকাতা, প্রকাশভবন, ১৩৯৯।  
  4. শিবেশকুমার চট্টোপাধ্যায়, প্রভাতকুমার : জীবন ও সাহিত্য, কলকাতা, দে’জ পাবলিশিং, ১৯৬০, পৃ. ২৬৭-৬৮
  5. শিবেশকুমার চট্টোপাধ্যায়, প্রভাতকুমার : জীবন ও সাহিত্য, কলকাতা, দে’জ পাবলিশিং, ১৯৬০, পৃ. ২৬৮
  6. সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা উপন্যাসের কালান্তর, কলকাতা, দে’জ পাবলিশিং, ২০২১, পৃ. ১৭৭
  7. শ্রীমদগবদ্গীতা,  সেবায়তন (ঝাড়গ্রাম) কর্তৃক প্রকাশিত, ১৩৫৫, পৃ. ১৩
  8. শিবেশকুমার চট্টোপাধ্যায়, প্রাগুক্ত, পৃ. ১৫৪
  9. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘বঙ্গসাহিত্যে উপন্যাসের ধারা’, গোপিকানাথ রায়চৌধুরী তাঁর ‘দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যকালীন কথাসাহিত্য’, শিবেশকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘প্রভাতকুমার : জীবন ও সাহিত্য’ প্রভৃতি গ্রন্থে গদাই পালের চারিত্রিক দৃঢ়তার প্রশংসা করেছেন।
  10. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্গসাহিত্যে উপন্যাসের ধারা, কলকাতা, মডার্ন বুক এজেন্সী, ২০২০, পৃ. ১১৯
  11. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বঙ্গসাহিত্যে উপন্যাসের ধারা, কলকাতা, মডার্ন বুক এজেন্সী, ২০২০, পৃ. ১১৮
  12. বিধায়ক ভট্টাচার্য এই উপন্যাসের নাট্যরূপ দিয়ে প্রকাশ করেন ১৩৪৭ বঙ্গাব্দে ডি এম লাইব্রেরি, কলকাতা থেকে। রঙমহল থিয়েটারে এর অভিনয় অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
  13. মানসী (স. সুবোধচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় ও অন্যান্য), ৫ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা, জ্যৈষ্ঠ ১৩২০, পৃ. ৩৪০
  14. শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাগুক্ত, পৃ. ১১৮
  15. কার্তিক লাহিড়ী, বাংলা উপন্যাসের রূপকল্প ও প্রযুক্তি, কলকাতা, প্রতিভাস, ১৯৯৯, পৃ. ১০২
  16. সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩১
  17. সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রাগুক্ত, পৃ. ২৩২-৩৩
  18. গোপিকানাথ রায়চৌধুরী, দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যকালীন বাংলা কথাসাহিত্য, কলকাতা, দে’জ পাবলিশিং, ২০১৮, পৃ. ৭৯-৮০

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *